কেন পড়ব পরিসংখ্যান?
সাকিব আল হাসানের ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট, লিওনেল মেসির শট কনভার্সন রেট, কেন গুরুত্বপূর্ণ, জানতে চাও? জানতে চাও কীভাবে বিশাল কোনো দুর্যোগের আগে ভবিষ্যৎবাণী করে বাঁচাতে পারবে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ? কিংবা ভূমিকা রাখতে চাও গুরুত্বপূর্ণ পলিসি মেকিং এ? জানতে চাও কী করে একটি সামান্য স্প্রেডশিট থেকে কত অসামান্য সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব? গণিত ভালো লাগে? আছে গবেষণায় আগ্রহ ? বর্তমান থেকে ভবিষ্যত জানতে ইচ্ছা হয়? তাহলে পরিসংখ্যান তোমার জন্যই ।
পরিসংখ্যান ডেটা নিয়ে কাজ করে। এটি ফলিত গণিতের একটি শাখা যা তোমাকে শেখাবে কী করে বর্তমানের তথ্য বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যত সম্পর্কে ধারণা করা যায়। কীভাবে একদল মানুষের তথ্য ব্যবহার করে একটি গোটা দেশের জনসংখ্যা সম্বন্ধে জানা যায়। ফলিত গণিতের শাখা হলেও গণিতের সাথে সুস্পষ্ট তফাত আছে পরিসংখ্যানের। গণিত যেখানে নির্দিষ্ট ফলাফল নিয়ে কাজ করে, পরিসংখ্যান সেখানে কাজ করে সম্ভাবনা নিয়ে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, কোনো দুর্যোগের সময় যখন দুর্যোগকবলিত মানুষের সংখ্যা জানা কিংবা ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা জানার জন্য সময় এবং টাকার অভাবে প্রত্যেকটা মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয় না, তখন পরিসংখ্যানের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষের তথ্য সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করে অনুমান করা হয় মোট ক্ষতির পরিমাণ। এবং চমকপ্রদ হলেও সত্যি যে সেই অনুমান পুরোপুরি নিখুঁত না হলেও নির্ভরযোগ্য। কে বলতে পারে পরিসংখ্যানে পড়ে হয়তো তুমিও লাখ লাখ মানুষের প্রাণ বাঁচাতে পারো একটি আগাম সতর্ক বাণী কিংবা তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে।
শুধু তাই নয়, পরিসংখ্যানের রয়েছে গবেষণার বিশাল ক্ষেত্র। পরিসংখ্যানের জ্ঞান ব্যবহার করে যেকোনো ঘটনার গাণিতিক মডেল যেমন বানিয়ে ফেলা সম্ভব ঠিক তেমনি তৈরি করা সম্ভব স্ট্যাটিস্টিক্যাল সফটওয়্যার প্যাকেজ। তোমার তৈরি স্ট্যাটিস্টিক্যাল সফটওয়্যার প্যাকেজ ব্যবহার করে ডিএনএ বিশ্লেষণ করে কোনো জটিল রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কার করে ফেলা যাচ্ছে ব্যাপারটা দারুন নয় কী?
কোথায় কোথায় পড়ানো হয়?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগ এবং ইন্সটিটিউট অফ স্ট্যাটিস্টিকাল রিসার্চ(আইএসআরটি)-এ ফলিত পরিসংখ্যান বিষয়টি পড়ানো হয়। এর পাশাপাশি প্রায় সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং কয়েকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যানের চার বছর মেয়াদী অনার্স প্রোগ্রাম চালু আছে।
একাডেমিক তথ্য:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিসংখ্যান বিভাগের চার বছর মেয়াদী স্নাতক প্রোগ্রামকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রতি বর্ষে বেশ কিছু তত্ত্বীয় কোর্স এবং কিছু ব্যবহারিক কোর্স থাকে। কোর্সগুলো হচ্ছে,
বেসিক স্ট্যাটিস্টিক্স
প্রবাবিলিটি
স্যাম্পলিং টেকনিকস
স্যাম্পলিং ডিস্ট্রিবিউশন
স্ট্যাটিস্টিকাল মেথডস
ডিজাইন এন্ড এনালাইসিস অফ এক্সপেরিমেন্ট
বায়োস্ট্যাটিস্টিক্স
ডেমোগ্রাফি
অপারেশন রিসার্চ
সিমুলেশন
এনোভা এন্ড লিনিয়ার ইনফারেন্স
ইকোনোমেট্রিক্স
আর প্রোগ্রামিং(R Programming)
স্টক্যাস্টিক প্রসেস
স্যাস(SAAS)
স্ট্যাটা(STATA)
এসপিএসএস(SPSS)
ম্যাথমেটিকাল মেথডস
রিয়েল এনালাইসিস
ক্যালকুলাস ইত্যাদি।
এছাড়াও চতুর্থ বর্ষে একটি রিসার্চ প্রজেক্টও করতে হয় শিক্ষার্থীদের। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পরিসংখ্যানকে হাতে-কলমে ঝালিয়ে নিতে পারেন।
জব মার্কেট:
পরিসংখ্যান বিষয়টি ছাইয়ের তলায় চাপা পড়া অমুল্য রত্নের মত। অনেকেই হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার আগে বিষয়টির নামও জানত না। কিন্তু ইউএস নিউজ এন্ড ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৯ সালের সেকেন্ড বেস্ট জব হিসেবে জায়গা করে নিয়েছিলো পরিসংখ্যানবিদের চাকরি। আজকের যুগে দাঁড়িয়ে পরিসংখ্যানের চাহিদা যে ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে তা বলা বাহুল্য। বিজনেস ডেইলি ২৪ এর মতে বাংলাদেশের সেরা দশ "হাই পেয়িং সেলারি"-র চাকরির মধ্যে পরিসংখ্যানবিদের চাকরি অন্যতম। পরিসংখ্যানের প্রয়োজন পড়ে না এমন ক্ষেত্র পাওয়া দুর্লভ। জ্যোতির্বিজ্ঞান থেকে অপরাধবিজ্ঞান, আপনি যেখানে যেতে চান, আপনার প্যাশন যেখানে কাজ করে, পরিসংখ্যানের ডিগ্রি নিয়ে সেই সব জায়গায় যাওয়া সম্ভব। সে হতে পারে সরকারি চাকরি কিংবা ফার্মাসিউটিক্যালস রিসার্চার অথবা ডেটা সায়েন্টিস্ট কিংবা গুগল, মাইক্রোসফটের মতো বিগ জায়ান্ট কোম্পানিতে কাজ করার সুযোগ।
এছাড়াও সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের সুযোগ তো রয়েছেই। কেননা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় প্রতিটি বিভাগেই পরিসংখ্যান অত্যাবশ্যক কোর্স হিসেবে সংযুক্ত থাকে।
একটি কথা প্রচলিত আছে, "পরিসংখ্যান হলো তরকারির আলুর মতো। সব তরকারির সাথেই মানানসই।"
স্যালারি:
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একজন দক্ষ পরিসংখ্যানবিদের গড় বাৎসরিক আয় প্রায় ১৬,৯৮০ ডলার। যদিও যুক্তরাষ্ট্রে একজন পরিসংখ্যানবিদের বাৎসরিক আয় গড়ে প্রায় ৮৪,০৬০ ডলার।
উচ্চশিক্ষা:
পরিসংখ্যানে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে। প্রতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিসংখ্যান বিভাগের অন্তত পনেরো থেকে বিশজন উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে বিদেশে পাড়ি জমান।
লেখকঃ
সামা জামিলা রহিম
পরিসংখ্যান বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়



Comments
Post a Comment