পেশা বাছাইয়ের নানান দিক - পর্ব ৫
সাতদিনে সাতটি “ক্যারিয়ার সিলেকশন” চ্যালেঞ্জের এই পর্বে আমরা কথা বলব বহুল আলোচিত একটি ইস্যু নিয়ে, যার নাম “Self-confidence and self-esteem” । আজকে আমরা জানব কেন এই সমস্যায় আমরা ভুগি, আর এ থেকে উত্তরণের উপায় কী!
আমরা অনেকে ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাংকার, অফিসার, গবেষক ইত্যাদি নানা পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করার। আবার অনেকে হতে চাই শিল্পী। কিন্তু বড় হতে হতে আমরা আবিষ্কার করি স্বপ্ন পূরণের পথটা আসলে সহজ নয়। অনেক চড়াই উৎরাই পেরোতে হয়। আর এই উঁচুনিচু পথ দেখে ঘাবড়ে যায় অনেকেই। কেউ হয়তো ভাবে এই কাজের জন্য পর্যাপ্ত যোগ্যতা অর্জন করা তাঁর পক্ষে সম্ভব না। আবার কেউ সবরকম দক্ষতা থাকার পরও ভয় পায় হেরে যাবার। একরাশ সম্ভাবনা নিয়ে ভালো কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে, আশেপাশে তাকিয়ে যখন দেখে আরও এমনি অগণিত শিক্ষার্থী একই পথের পথিক, তখন নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে নিজেই সন্দিহান হয়ে পড়ে। এই আত্মবিশ্বাসের ঘাটতির ফলে নিজেই নিজের স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
আবার আমাদের সমাজে মনোবল ভেঙে দেবার মতো লোকেরও অভাব নেই। প্রতিনিয়ত সমালোচনামূলক কথা শুনতে থাকলে নিজের অজান্তেই একধরণের হীনম্মন্যতা ভর করে বসে আমাদের মনে। আমাদের যোগ্যতা ও সংকল্পের উপর ভরসা হারাতে থাকি আমরা। অন্যদিকে, তথাকথিত ক্লাস ডিভিশন এর কারণে কিছু কিছু পেশা সমাজে খুব বেশি অগ্রাধিকার পেয়ে যায়, কোনো কোনো পেশা একেবারেই গ্রহণযোগ্যতা পায় না। ফলশ্রুতিতে, যখনই তুমি আউট অফ দা বক্স কিছু করতে চাইবে, সংকীর্ণ চিন্তাধারার সমাজ তোমাকে পেছন থেকে টেনে ধরবে। তোমার দৃঢ় মনোবলে ফাটল ধরিয়ে দেবার চেষ্টা করবে।
মনে রাখবে, আত্মবিশ্বাস তোমার মনে। “দশজনে পারে যাহা তুমিও পারিবে তাহা” এই মূলমন্ত্রকে বুকে ধরে এগিয়ে যাও। একেকজন মানুষ একেকরকম, একেকজনের দক্ষতা একেকরকম। কেউ কেউ জন্মগতভাবে কিছু গুণের অধিকারী, আর কাউকে পরিশ্রম করে তা অর্জন করতে হয়। তোমার চিনতে হবে নিজেকে। কাজেই নিজেকে সময় দাও, বুঝতে শেখো তোমার শক্তি কোথায়, আর দুর্বলতা কোথায়। হোঁচট খেয়ে থেমে গেলে হবে না। পরাজয় জীবনের অংশ, জয় দিয়ে তার সমাপ্তি। অন্যের অর্জনের দিকে তাকিয়ে নয়, লক্ষ্যে স্থির থেকে নিজের পথ নিজে তৈরি করে নাও।
জীবনের কোনো সিদ্ধান্তই সহজ নয়। প্রতিটি যাত্রার নিজস্ব সংগ্রাম আছে, প্রতিটি সাফল্যের নিজস্ব গল্প আছে। তুমি তোমার উপর আস্থা রাখলে যেকোনো বাধা পেরোতে পারবে। আর হ্যাঁ, তাদের কথাকেই গুরুত্ব দেবে, যাদের উপর তুমি ভরসা করতে পারো। বাবা-মা, ভাই-বোন বা কাছের কোনো বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষী; পরামর্শ নিলে তাদের কাছ থেকে নাও। যেহেতু তারা তোমার মঙ্গল কামনা করেন, কাজেই তাদের মতামত ও উপদেশের উপর নির্ভর করো। দেখবে দিনশেষে বাইরের প্রতিকূল পরিবেশ থেকে তারাই তোমাকে রক্ষা করবেন।
সবশেষে বলব, অন্য কারো কাছে নয়, নিজের কাছে নিজেকে প্রমাণ করো। তোমার যোগ্যতা ও অর্জন তোমার নিজের চেয়ে ভালো করে কেউ মূল্যায়ন করতে পারবে না। আর তুমি নিজের সিদ্ধান্তকে সম্মান না করলে কোনোদিনই কারোর সমর্থন পাবে না। তাই নিজের প্রতি ভালোবাসা আর বিশ্বাস গড়ে তোলো, জীবনের চাপ নিজের মাথায় না নিয়ে স্বচ্ছন্দে কাজ করো। নিজেকে ছোট ছোট টাস্ক দাও, পারলে সাবাশ, না পারলে নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে এগিয়ে যাও। স্বপ্নের প্রতি অবিচল থাকো, সাধনা করো, সফল হবেই।
লেখকঃ
রিফাহ তাসনিয়া পূর্বিতা
প্রথম বর্ষ, অর্থনীতি বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।



Comments
Post a Comment