লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং - কেন পড়ব?

 

“ভাবী জানেন অমুকের ছেলে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। এইসব কেউ পড়ে নাকি? সারাজীবন ভাল রেজাল্ট করে লাভ কী হল? বানাবে তো এখন জুতাই!” – এই ধরনের কথাগুলো মোটামুটি আশেপাশে কান পাতলে শোনাই যায়।

ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্ট হলেও কম জানা থাকায় কিংবা সঠিক জ্ঞান না থাকায় আমাদের দেশে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বেশ অবহেলিত একটি সাবজেক্ট। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনে পোশাক শিল্পের পরেই সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে চামড়াজাত শিল্প। অবহেলা করলেও তাই লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এর গুরুত্ব কিংবা সম্ভাবনা অপরিসীম। স্রোতের বিপরীতে হেঁটে যদি হতে চাও সফল কিংবা রাখতে চাও দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান, লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং হতে পারে তোমার জন্য দারুণ একটি সুযোগ। আজকের পর্বে আমরা জানবো লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এর ইতিবৃত্ত।

লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং কি?

লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং মূলত চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্যকে সংশ্লেষণ, উৎপাদন ও পরিশুদ্ধকরণকে বুঝায়। যার মাধ্যমে পরবর্তীতে বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রী যেমনঃ ফুটওয়ার, ব্যাগ, জুতা, মানিব্যাগ, জ্যাকেট, খেলার সামগ্রীসহ বিভিন্ন বিলাসবহুল জিনিস তৈরি করা হয়।

কোথায় কোথায় পড়ানো হয়? 

আমাদের দেশে বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের Institute of Leather Engineering and Technology (ILET) এবং কুয়েট এই দুই জায়গাতেই লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হয়।

কত বছর মেয়াদী এবং কি পড়ানো হয়?

লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং চার বছর মেয়াদী কোর্স।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ILET এ লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং, লেদার প্রোডাক্ট ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ফুটওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং এই তিনটি আলাদা আলাদাভাবে পড়ানো হয়। তবে কুয়েটে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং, লেদার প্রোডাক্ট ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ফুটওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং তিনটি সাবজেক্টই একসাথে পড়ানো হয়। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা চাইলে যেকোনো সেক্টরে যেতে পারেন।

লেদার সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে মূলত পড়ানো হয় কাঁচা চামড়া থেকে লেদার তৈরির বিভিন্ন কলাকৌশল, ব্যবহার উপযোগী লেদার উৎপাদন, বিভিন্ন চামড়াজাত পণ্যের ডিজাইন ও নির্মাণকৌশল ইত্যাদি। এছাড়া বিভিন্ন ফলিত বিজ্ঞানের কোর্সও করানো হয়ে থাকে।

উচ্চশিক্ষার সুযোগঃ

বিএসসি করার পর বিদেশে উচ্চশিক্ষাগ্রহণেরও দারুণ সুযোগ আছে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এ। শিক্ষার্থীরা এনভায়রনমেন্ট সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে পারেন।

চাকরির বাজারঃ

লেদার ইঞ্জিনিয়ারদের চাকরির ক্ষেত্রে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি চাকরির মাঝে বিসিএস, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো, লেদার রিসার্স ইন্সটিটিউটসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকে চাকরি করার সুযোগ রয়েছে।

এছাড়া বিদেশী বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠান যেমন এপেক্স, বাটা, লোটো, এডিডাস, নাইকি, পুমা ইত্যাদি এদের সাথে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া আমাদের চামড়াশিল্প বেশ সমৃদ্ধ। সাভার, আশুলিয়া, চট্টগ্রামসহ এদেশে অসংখ্য লেদার ফ্যাক্টরি রয়েছে।

আমাদের দেশের অন্যান্য সাব্জেক্টগুলোর তুলনায় লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনার সুযোগ কম থাকায় চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতাও তূলনামূলক কম। অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ চামড়াশিল্প কারখানা থাকায় সহজেই চাকরি পাওয়া যেতে পারে।

স্যালারী কেমন?

একজন ফ্রেশ গ্রাজুয়েট সাধারণত চাকরিতে জয়েন করলেই ১৫-২৫ হাজার টাকা বেতন পায়। পরবর্তীতে তা বাড়তে বাড়তে বেশ ভাল অঙ্কে পরিণত হয়।

 শ্রমবাজার তূলনামূলক কম হওয়ায় এবং কাঁচামালের প্রাচুর্য্যতার কারণে বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক শক্তিশালী একটি সেক্টরে পরিণত হয়েছে এটি। বিদেশী অসংখ্য প্রতিষ্ঠান এদেশে কারখানা স্থাপন করছে যার পরিচালনার জন্য দরকার অনেক দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার। তাই যদি পরিশ্রম করতে পারো লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে চাকরির জন্য বসে থাকতে হবেনা। 

তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেনঃ

আকিব জুবায়ের

লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং

কুয়েট

লিখেছেনঃ

মোঃ আবু জুবায়ের

কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং

আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ

Image source: Image by LUM3N from Pixabay 



Comments