সিভিল এন্ড এনভায়রনমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং - কেন পড়ব?
একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারকে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন, প্রকৌশলী হওয়ার জন্য আপনি কেন গর্ববোধ করছেন? তিনি হাসলেন এবং বললেন, একজন আইনজীবীর আয় বাড়ে দেশে খুনাখুনি, অপরাধ ও মামলা বৃদ্ধির সাথে,একজন ডাক্তারের আয় বাড়ে মানুষের অসুস্থতা, রোগ শোক বৃদ্ধির সঙ্গে। কিন্তু একজন প্রকৌশলীর আয় বৃদ্ধি পায় মানুষের এবং জাতির সমৃদ্ধির সঙ্গে। দেশ এগিয়ে গেলে সব ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাড়ে, আমাদের আয়ও বাড়ে। সে কারণে আমদের আয় বৃদ্ধির সাথে সমগ্র দেশের মানুষের উন্নয়নের সুখবর জড়িত সেই কারনে আমরা গর্ববোধ করি।
সে যাই হোক,প্রাচীনকাল থেকে মানুষের ইঞ্জিনিয়ারিং বলতে যা বুঝে এসেছে তা হচ্ছে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং,পৃথিবীর শুরু থেকে আজ অব্দি এর যাত্রা চলছে, পৃথিবীর শেষ পর্যন্ত যতদিন মানব সভ্যতা টিকে আছে, অবকাঠামোগত উন্নয়নের এই ধারা এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের যাত্রা চলবেই।
বিষয়বস্তুঃ
Civil বা পুরকৌশল পেশাদার প্রকৌশল বিদ্যার একটি অন্যতম শাখা যেখানে নকশা, নির্মান কৌশল, বাস্তবিক বা প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা পরিবেশের ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করা হয়। পুরকৌশল বিদ্যায় মূলত বিভিন্ন নির্মাণ কৌশল যেমন ভবন, সেতু, রাস্তা, বাধ, পরিখা, স্তম্ভ ইত্যাদি নির্মাণ কৌশল এবং নির্মাণ পরবর্তী রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। তাছাড়া একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারকে জরিপ ও প্রকল্প ব্যবস্থাপনার কাজও করতে হয় সমান দক্ষতার সাথে। বাড়ি-ঘর, দালান-কোঠা, রাস্তা-ঘাট,ফ্লাইওভার, বাঁধ, উচু টাওয়ার, এয়ারপোর্ট, সুয়ারেজ লাইন, পানির পাইপ লাইন, বর্জ্য নিষ্কাশন ও রিসাইক্লিং সিস্টেম, ভূমিকম্পের কারণ ও প্রতিরোধ ইত্যাদি বিষয়সমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
সময়ের সাথে সাথে বেড়েছে পুরকৌশলবিদ্যার পরিসর। দিনে দিনে সৃষ্টি হয়েছে এর বেশ কয়েকটি শাখা। এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হল
I. Structural Engineering
II. Transportation Engineering
III. Geo-technical Engineering
IV. Environmental Engineering
এছাড়া Water Resource কেও Civil এর একটি শাখা বলা যায়। তবে বুয়েটে Water Resource Engineering নামে স্বতন্ত্র একটি Department আছে।
একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের কি কি দক্ষতা ও জ্ঞান থাকা প্রয়োজন?
এই পেশায় কাজ করতে হলে গনিত ও পদার্থবিজ্ঞানে ভালো জ্ঞান থাকা আবশ্যক। পাশাপাশি নকশা ও মডেলিংয়ের কাজকে ভালবাসতে হবে, এ বিষয়ক কিছু সফটওয়্যারে ভালো দখল থাকা জরুরি যেমনঃ AUTOCAD, AUTOCAD CIVIL 3D, রেভিট, SAP2000 ইত্যাদি।
কোথায় কোথায় পড়ানো হয় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং?
বাংলাদেশের প্রায় সব সরকারি-বেসরকারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হয়। পাশাপাশি ভোকেশনাল বা পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটগুলো থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রি নেবার ব্যবস্থা রয়েছে। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট (IEB) অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়া শ্রেয়। এর কারণ হলো, কিছু কিছু জায়গায় আইইবির অনুমোদনহীন সার্টিফিকেটধারী ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগ পেতে সমস্যা হয়।
একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের মাসিক আয় কেমন?
প্রতিষ্ঠান ও কাজ ভেদে এন্ট্রি লেভেলে একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের মাসিক আয় সাধারণত ৳৪০,০০০ থেকে শুরু করে ৳৬০,০০০ পর্যন্ত হতে পারে। সরকারি খাতে জাতীয় বেতন স্কেল অনুসরণ করে সাধারণত ৯ম জাতীয় গ্রেডে ৳৩২,০০০ স্কেলে নিয়োগ দেয়া হয়, যা পরবর্তীতে পদোন্নতির সাথে সাথে বেড়ে যায়।চাকরির পাশাপাশি অনেক সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করে মাসে কয়েক লক্ষ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করে থাকেন। তবে এর জন্য কারিগরি কাজের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন।
একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?
সরকারি-বেসরকারি প্রায় সব প্রতিষ্ঠানে সহকারী ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে আপনার ক্যারিয়ার শুরু হবে। চাকরির ৩-৫ বছরের মধ্যে পদোন্নতি পাবেন। এ ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সরকারি পদ হলো প্রধান প্রকৌশলী। প্রাইভেট ফার্ম বা কোম্পানির ক্ষেত্রে একজন ব্যবস্থাপনা নির্বাহী হিসাবে নিয়োগ পেতে পারেন।বেসরকারি খাতে অনেকে কনসালট্যান্ট ফার্ম বা নির্মাণ প্রতিষ্ঠান তৈরি করে স্বাধীনভাবে কাজ করেন।
চাহিদাঃ
যে সকল বিষয়ের চাহিদা পূর্বেও সব সময় ছিল, এখনও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে তার মধ্যে সিভিল অন্যতম। এদেশে এখন অসংখ্য Real Estate বা construction/consultation ফার্ম আছে, যেগুলোতে প্রচুর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং দরকার। এছাড়াও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের সরকারি চাকরির সুযোগ অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারদের তুলনায় অনেক বেশি।
ভবিষ্যৎঃ
উন্নয়নশীল দেশ হওয়ায় সিভিলের চাহিদা ভবিষ্যতে বাড়বেই। জলবায়ু পরিবর্তন সংশ্লিষ্ট সমস্যার কারনে পরিবেশ প্রকৌশলের প্রয়োজন বাড়ছে। পৃথিবী ধ্বংসের আগ পর্যন্ত নির্মাণ কাজ যেমন চলতেই থাকবে, পুরকৌশলীদের চাহিদাও ঠিক সেদিন পর্যন্ত থাকবেই!
কর্মক্ষেত্রঃ
১। সরকারী বিভিন্ন বিভাগ- সড়ক ও জনপদ বিভাগ, জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর, গণপূর্ত বিভাগ, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর, আবহাওয়া অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন অধিদপ্তর প্রভৃতিতে প্রকৌশলী হিসেবে।
২। বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলায় নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে।
৩। বিভিন্ন নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ- রাজউক, কেডিএ, সিডিএ প্রভৃতিতে প্রকৌশলী হিসেবে।
৪। রিয়েল এস্টেট কোম্পানি, বিভিন্ন ডেভলপার কোম্পানি,Consultancy ফার্ম, বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান (NGO)।
৫। সামরিক বাহিনী।
৬। বিভিন্ন গবেষনা ইন্সটিটিউটে।
৭। সরকারী ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা।
৮। PWD, BIWTA, BIWTC, BRTC, WASA, PDB
৯। Grameen Phone, Banglalink সহ অন্যান্য মোবাইল কোম্পানিতে কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে।
স্কলারশীপ ও উচ্চশিক্ষাঃ
MIT সহ অন্যান্য Institute/University-তেও সর্বোচ্চ মানের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি প্রদান করা হয়। Imperial College London, University of California at Berkeley (UCB), Massachusetts Institute of Technology (MIT), University of Illinois at Urbana-Champaign, University of Cambridge, University of Oxford, The University of Melbourne, The University of Queensland এ এই বিষয়ে পড়া যায়।
প্রায় সব খ্যাতনামা Technical Institute এবং University –তে সিভিল ইঞ্জিনিনিয়ারিং আছে। তবে Stamford University কর্তৃক প্রদত্ত সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি খুব উন্নতমানের।
লিখেছেনঃ
নাফিসা বিনতে মোমিন
সিভিল এন্ড এনভায়রনমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং,
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলোজি।



Comments
Post a Comment